তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত (كتاب التهجد)

তাহাজ্জুদ (আরবি: تهجد‎‎), রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল নামেও পরিচিত, ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্যে একটি ঐচ্ছিক ইবাদত। এটা বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইসলামের নবী মুহাম্মদ নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং তার সাহাবীদের এটা পালনে উৎসাহিত করতেন। 



আল কুরআনে তাহাজ্জুদ সালাততারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে।" (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ১৭-১৮)। আল কুরআনের সূরা আল মুজাম্মিল এ উল্লেখ করা হয়েছে "অবশ্য রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কুরআন পাঠ বা জিকর একেবারে যথার্থ।" সূরা আল ফুরকান-এর ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে "আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।" "তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী"। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৭) 

হাদীসে তাহাজ্জুদ সালাত : আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, "আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।" হজরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম) 

সালাতের নিয়ম : তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে। এ নামাজের রাকাত সংখ্যাসর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ ৮ রাকাত পড়া উত্তম। তবে আরও বেশি পড়া জায়েজ আছে। এরপরে বিতর নামাজ পড়া। তাহাজ্জুদ পড়ার নিয়ম হচ্ছে দুই রাকাত দুই রাকাত করে যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে পড়া। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি পড়া কর্তব্য। জামাতে পড়া রমজান ছাড়া অন্য সময় মাঝেমধ্যে জামাতে পড়া জায়েজ আছে তবে নিয়মিতভাবে নয়।

তাহাজ্জুদ (ঘুম থেকে জেগে) সালাত আদায় করা। মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আপনি রাতের এক অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করুন, যা আপনার জন্য অতিরিক্ত কর্তব্য
Performing tahajjud (waking from sleep) prayer. The word of God Almighty: And you perform tahajjud in one part of the night, which is an additional duty for you

আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন, তখন দু আ পড়তেন- "ইয়া আল্লাহ! আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান যমীন এবং তাদের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর মালিক আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান যমীন এবং এ দু য়ের মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুর নূর। আপনারই জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য; আপনার সাক্ষাত সত্য; আপনার বাণী সত্য; জান্নাত সত্য; জাহান্নাম সত্য; নাবীগণ সত্য; মুহাম্মাদ সত্য, কিয়ামত সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পন করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরেই তাওয়াক্কুল করালাম, আপনার দিকেই রুজূ করলাম; আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার পূর্বাপর ও প্রকাশ্য গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনই অগ্র পশ্চাতের মালিক। আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, অথবা (অপর বর্ণনায়) আপনি ব্যতীত আর কোন মা বূদ নেই।"
সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, (অপর সূত্রে) আবদুল করীম আবূ উমাইয়্যা (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ (অংশটুকু) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে থেকে বর্ণনা করেছেন।
সহিহ বুখারী হাদিস নং - ১০৫৪